বাজারে গিয়ে প্রয়োজনীয় জিনিস কিনতে ভুলে যাওয়াই হোক বা দরকারি জিনিসপত্র বা অফিসের ফাইল কোথায় রাখছি তার হিসাব গুলিয়ে দফারফা। একটু বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে এমন ভুলে যাওয়ার শিকার কমবেশি আমরা সকলেই। প্রাথমিক ভাবে টুকটাক বিষয় ভুলে যাওয়া দিয়ে এমনটা শুরু হলেও পরবর্তীতে তা ডিমেনসিয়ায় পরিণত হয় অনেকের ক্ষেত্রেই। ডিমেনসিয়া রুখতে শরীরচর্চা ও মস্তিষ্কের নানা ব্যায়ামের কথা গবেষকরা আগে থেকেই বলেছেন। এ বার সে তালিকায় জুড়ে দিলেন এ বার খুব পরিচিত এই খাবারও।
স্বাস্থ্যরক্ষায় বাদামের অপরিহার্যতার কথা অনেকেই জানেন। পুষ্টিবিদরা সাফ জানিয়ে দিচ্ছেন, শরীরে ম্যাগনেশিয়াম ও আয়রনের পরিমাণ বাড়াতে ডায়েটে রাখতেই হবে বাদাম। তবে এখানেই শেষ নয়, ভুলে যাওয়া রুখতেও এই খাবার নাকি ভেল্কি দেখাতে পারে! অন্তত গবেষকদের দাবি তেমনটাই।
সাউথ অস্ট্রেলিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের এক দল গবেষক প্রায় ৪ হাজার ৯০০ জন বয়স্ক চিনা নাগরিকের উপর পরীক্ষা করার পরে বাদামের একটি বিশেষ গুণ সম্পর্কে সিদ্ধান্তে এসেছেন। মুখ্য গবেষক মিং লি-এর মতে, বাদামের মধ্যে এমন কিছু কার্যকরী উপাদান, বিশেষত ম্যাগনেশিয়াম ও আয়রণ থাকায় তা বার্ধক্যজনিত ভুলে যাওয়ার রোগের দাওয়াই হয়ে উঠতে পারে। লি বলছেন, ‘‘প্রতিদিন ১০ গ্রামের বেশি বাদম ডায়েটে রাখলে একজন বয়স্ক লোকের মস্তিষ্ক অন্যদের তুলনায় ৬০ শতাংশ বেশি সক্রিয় থাকবে।’
বাদামের নানা গুণের মধ্যে স্মৃতিশক্তি ধরে রাখাও অন্যতম।
প্রসঙ্গত বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (হু) মতে, ২০২০ সালের মধ্যে গোটা বিশ্বে ষাটোর্ধ্ব নাগরিকের সংখ্যা পাঁচ বা তার কম বয়সি নাগরিকের থেকে বেড়ে যাবে। তারা আরও জানাচ্ছে, এই মুহূর্তে বিশ্বে প্রায় ৪৭ লক্ষ বয়স্ক লোক বার্ধক্যজনিত বিস্মৃতির সমস্যায় ভুগছেন। এই রোগের পোশাকি নাম ডিমেনসিয়া। আগামী কয়েক বছর পাল্লা দিয়ে বাড়বে এই রোগে আক্রান্তের সংখ্যা। ২০৫০ এর মধ্যে এই সংখ্যাটা তিন গুণ হবে। স্বাভাবিক ভাবেই, বিশ্বের অন্যতম জনবহুল দেশ চিন ও ভারতবর্ষেই রোগীর সংখ্যা হবে অন্য দেশগুলির তুলনা কয়েক গুণ বেশি।
এই পরিস্থিতিতেই আশার আলো দেখাচ্ছে বাদামের এই বিশেষ গুণ। বিশেষজ্ঞদের মতে, বাদামে প্রচুর পরিমাণে উপকারী ফ্যাট, প্রোটিন ও ফাইবার যা রক্তে ক্ষতিকর কোলেস্টরেলের মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করে। সক্রিয় রাখে মস্তিষ্ককে। এই প্রসঙ্গে মনোবিদ অমিতাভ মুখোপাধ্যায়ের মতে, ‘‘বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে ডিমেনসিয়া হানা দেয় অনেকের শরীরেই। আমরা চিকিৎসকরা সব সময়ই মস্তিষ্কের ব্যায়ামের কথা বলি। এর সঙ্গে কিছু কিছু খাবারকেও ডায়েটে রাখতে হয়। আয়রণ বা ম্যাগনেসিয়াম সমৃদ্ধ খাবার স্মৃতিকে ধরে রাখতে সাহায্য করে, তা ঠিকই। তবে বাদাম কেমন করে খাচ্ছি, তার উপরেও কিছুটা খাদ্যগুণ নির্ভর করে। খুব নুন-মশলা দিয়ে বাদাম কিন্তু শরীরের ক্ষতি করে। তার চেয়ে কাঁচা বাদাম জলে ভিজিয়ে খেতে পারলে তা সব দিক থেকেই ভাল। আর তা না পারলে নুন-মশলা ছাড়া বালিতে বাজা বাদাম খান।’’
সুতরাং আর দেরি নয়। প্রতি দিনের ডায়েটে জুড়ে নিন এক মুঠো বাদাম। স্মৃতির স্বাস্থ্য অবহেলা করলে মাসুল গুণতে হবে আপনাকেই।