class="post-template-default single single-post postid-21280 single-format-standard wp-custom-logo group-blog vl-boxed aa-prefix-matin-">
Shadow

গানের রানি সিঁথি সরকার

সিঁথিবসন্তের বাতাস না থাকলেও টিএসসির বারান্দায় শরতের হালকা শীতল বাতাস বইছিল। আকাশেও মেঘ ডাকছিল সামান্য। বৃষ্টি নামবে নামবে অবস্থা। এমন আর্দ্র আবহাওয়ায় সিঁথির সঙ্গে জুড়ে দিলাম গানের গল্প।  গানে অর্জনের শেষ নেই সিঁথি সরকারের। ঘরের একটা আলমারি ভরে গেছে তার পুরস্কারে। সিঁথির মা বললেন, ‘সিঁথির পুরস্কারগুলো দিয়ে একটা ছোটখাটো জাদুঘর হয়ে গেছে আমার ঘরে।’

জাতীয় পর্যায়ে ২০১৭ সালে ‘জাতীয় শিক্ষা সপ্তাহে’ রবীন্দ্রসংগীতে চ্যাম্পিয়ন সিঁথি। ‘শাপলা কুঁড়ি জাতীয় শিশুশিল্পী প্রতিযোগিতা ২০১৮’-তে দেশাত্মবোধক গান, নজরুলগীতি ও রবীন্দ্রসংগীত—এ তিন ক্যাটাগরিতেই জাতীয় পর্যায়ে প্রথম হয় সিঁথি। ‘জাতীয় শিশু পুরস্কার প্রতিযোগিতা ২০১৮’-তে জাতীয় পর্যায়ে ‘খ’ শাখায় রৌপ্য গলায় ঝোলায় ও। শুধু রৌপ্য নয়, দুটি স্বর্ণপদকও পেয়েছে ‘বঙ্গবন্ধু শিশু-কিশোর পদক ২০১৮’ জাতীয় পর্যায়ে নজরুলগীতি ও রবীন্দ্রসংগীতে। শুধু একক অর্জনেই থেমে নেই সিঁথি। দলীয়ভাবে ‘শুদ্ধস্বর জাতীয় সংগীত পরিবেশনা ২০১৮’-তে জাতীয় পর্যায়ে স্বর্ণপদক অর্জন করেছে তার দল।

এত এত অর্জনের রহস্যটা কী? সিঁথি হাসতে হাসতে বলল, ‘গোপন কোনো ফর্মুলা নেই। আমার গানের হাতেখড়ি মা-বাবার কাছে। পরিবারের সবাই গান গাইতে পছন্দ করে। এককথায় বলা যায়, সংগীতমুখর পরিবার আমাদের। গানের অ আ ক খ শিখেছি সেখানেই। যেহেতু ময়মনসিংহে বড় হয়ে ওঠা, তাই সেখানেই শেখা শুরু।’

এখন ময়মনসিংহ শিল্পকলা একাডেমিতে গান শিখছে সিঁথি। প্রতিদিন সকালে মা-বাবার কাছ থেকে গানের তালিম নেয়। ভোরে ঘুম থেকে উঠেই রেওয়াজ। ভুল হলে ধরিয়ে দেন গানের শিক্ষক আশিক সরকার তুষার।

সিঁথি সরকার লিখে ইউটিউবে সার্চ দিয়ে দেখি—অবাক কাণ্ড! সিঁথির প্রতিটি গানের ভিডিওতে আছে লাখ লাখ ভিউ! কেমন লাগে এই অনুভূতি? সিঁথি বলল, ‘আমার লাইফে সবচেয়ে বড় টার্নিং পয়েন্ট গানের রাজায় তৃতীয় স্থান অর্জন। সেখান থেকেই ভক্তের সংখ্যা বাড়তে শুরু করেছে।’

এ প্রতিযোগিতায় দেশের সাত বিভাগ থেকে প্রায় পাঁচ হাজার প্রতিযোগী অংশ নিয়েছিল। প্রতিটি বিভাগ থেকে ৫০ জন করে নির্বাচন করা হয়। সেখানে তৃতীয় হওয়াটাও কম নয়।

প্রিয় শিল্পীর কথা জানতে চাইলে সিঁথি বলল রুনা লায়লা, সাবিনা ইয়াসমিনের নাম। দেশের বাইরে সবার আগে শ্রেয়া ঘোষাল। তাঁর অনেক বড় ভক্ত সিঁথি। স্বপ্ন দেখে, একদিন শ্রেয়ার মতো প্লেব্যাক শিল্পী হবে সে-ও।

জানতে চাইলাম, গানের রাজায় চূড়ান্ত পর্বে বিচারক হিসেবে প্রিয় শিল্পী রুনা লায়লাকে পেয়েছ। তাঁর কাছ থেকে কোনো টিপস নাওনি? সিঁথি জানাল, ‘রুনা লায়লা ম্যাডাম আমার গানের প্রশংসা করেছেন। তিনি এ-ও বলেছেন, গানের রাজা কে হবে জানি না, কিন্তু আমার জন্য তুমি গানের রানি। এ ছাড়া তিনি ফাইনালের মঞ্চে ঘোষণা দেন, তাঁর নিজের সুরে আমাকে তিনি একটা গান গাওয়ার সুযোগ দেবেন। সত্যি এটা আমার কাছে অনেক বড় প্রাপ্তি। এ ছাড়া নিয়মিত আসরের বিচারক হিসেবে ছিলেন সোমনূর মনির কোনাল ও ইমরান মাহমুদুল ভাইয়া। ইমরান ভাইয়া ঘোষণা দেন, সেরা পাঁচজনকে নিয়ে একটি করে মৌলিক গান তৈরি হবে তাঁর তত্ত্বাবধানে। গানটির রেকর্ডিং শেষ। হয়তো কিছুদিনের মধ্যে আমার কণ্ঠে মৌলিক গান শুনতে পাবে সবাই।’

গানের রাজার যাত্রাটা কেমন ছিল জানতে চাইলে সিঁথি বলে, ‘বাবা একদিন টিভিতে বিজ্ঞাপন দেখেন। ঢাকা ও ময়মনসিংহ জেলার অডিশন একসঙ্গে হবে। যখন আমাদের শো হয়েছে, তখন চ্যানেল আইয়ের ক্যাম্পে থাকতে হয়েছিল। তখন কিছু ভালো বন্ধু পাই। অনেক মজাও করেছি। খাওয়া নিয়ে আমার মজার অভিনয় দেখে সবার সেকি হাসি! একজন তো চেয়ার থেকে পড়েই গিয়েছিল।’

গানের রাজার মহোত্সবে ‘তুমি আমার প্রথম সকাল…’ গানটি তপন চৌধুরীর সঙ্গে গেয়েছিল সিঁথি। এত বড় শিল্পীর সঙ্গে একসঙ্গে গাইলে, নার্ভাস হওনি?

‘আমাদের আগে অনুশীলন হয়েছিল। সেখানে আমাকে দেখেই তপন স্যার বলেছেন, তুই কথাই বলতে পারিস না, গান গাইবি কিভাবে? তখন সামান্য ভয় পেয়ে যাই। গান শেষে বললেন, আমার সঙ্গে এ পর্যন্ত মঞ্চে গেয়েছে যারা, তাদের মধ্যে সবচেয়ে ছোট তুই।’

প্রশ্ন করলাম, গান নিয়ে কোনো স্মৃতি আছে কি না, যা এখনো মনে পড়ে। সিঁথি বলল, ‘জাতীয় শিশু পুরস্কার প্রতিযোগিতায় জাতীয় পর্যায়ে সেরাদের নিয়ে ছড়াগানের একটি সিডি প্রকাশ হয়েছে। সেখানে আমিও ছিলাম। সিডিতে আমার একটা গান ছিল। গানটির সংগীত পরিচালক ছিলেন পার্থ বড়ুয়া স্যার। তাঁর সঙ্গে কাজ করার সময়টা ছিল অসাধারণ।’

এই ফাঁকে সিঁথি জানিয়ে দিল, সামনে জেএসসি। এরপর নিজের একটা অ্যালবাম রিলিজ করতে চায় ও।

এদিকে স্কুলে এককথায় তারকাই বটে সিঁথি। স্কুলে গেলেই ম্যাডামরা জড়িয়ে ধরে আদর করেন তাকে। বন্ধুরা তো উঠতে-বসতে গান শোনানোর আবদার করে। মজার ব্যাপার হলো, সিঁথির স্কুলে নাকি কয়েকজন রাগী ম্যাডাম ছিলেন। সিঁথির গান শুনে নাকি তাঁদের রাগ নরম হয়ে গেছে। ‘গানের রাজায় অংশ নেওয়ায় চার মাস স্কুলে যেতে পারিনি। ওই সময় আমার পড়াশোনায় যাতে সমস্যা না হয়, সে জন্য আমার পাশে ছিলেন সবাই। বিশেষ করে আমি আমার প্রধান শিক্ষকের কাছে অনেক অনেক কৃতজ্ঞ।’

এর মধ্যে প্রতি মাসেই স্টেজ শো করেছে সিঁথি। তবে পরীক্ষার কারণে আপাতত সেটা বন্ধ। পিএসসিতে কিন্তু ট্যালেন্টপুল বৃত্তিই পেয়েছিল ও। এবারও পাওয়ার ইচ্ছা আছে। ‘এ কারণে কম করে হলেও পাঁচটা শো বাদ দিতে হয়েছে। পরীক্ষার পর পুরোদমে কাজ শুরু করব।’

তোমরা যারা গান শিখবে বা শিখছ, তাদের জন্য সিঁথি জানাল, ‘প্রচুর অনুশীলন এবং পরিশ্রম করতে হয়। অবশ্যই মা-বাবার অনুপ্রেরণা দরকার।’  সিঁথির মা বললেন, ‘ছোট থেকেই মেয়েকে সংগীতশিল্পী বানানোর ইচ্ছা ছিল। তাই ছোটবেলায় আবৃত্তি শেখানোর জন্য ভর্তি করিয়েছি। এতে উচ্চারণ মার্জিত হয়। এরপর গান শেখানো শুরু।’

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Please disable your adblocker or whitelist this site!