মিষ্টি কুমড়া একটি বেশ প্রচলিত সবজি এবং প্রায় সবজায়গায়ই পাওয়া যায়। বিশেষ করে শীতের ঋতুতে। রান্না করার সময়ে অনেকেই কুমড়ার বীজ ফেলে দেয়। কিন্তু জানেন কী মিষ্টি কুমড়ার বীজ এর আছে অনেক স্বাস্থ্যগুণ। এটি সবথেকে পুষ্টিকর বীজগুলোর মধ্যে একটি, যাতে প্রচুর ম্যাগনেসিয়াম, ওমেগা থ্রি এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট রয়েছে। আমাদের প্রতিদিনের শর্করার প্রায় ৭০ ভাগই কুমড়ার বীজ দ্বারা পূরণ করা সম্ভব।
মিষ্টি কুমড়ার বীজ হতে পারে ডায়বেটিস রোগীদের খাদ্যাভ্যাসে একটি উত্তম সংযোজন। মিষ্টি কুমড়ার বীজ রক্তের শর্করার মাত্রা কমাতে সাহায্য করতে পারে এবং এ নিয়ে বেশ কিছু গবেষণাও করা হয়েছে। চলুন সে সম্পর্কেই কিছু ধারণা নেয়া যাক।
কুমড়ার বীজের উপকার: আছে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট, ম্যাগনেসিয়াম, ফাইবার, স্বাস্থ্যকর চর্বি এবং জিঙ্কের চমৎকার উৎস :
-
মিষ্টি কুমড়ার বীজ ভিটামিন ই এবং ক্যারোটিনয়েডের মতো অ্যান্টিঅক্সিডেন্টে সমৃদ্ধ। অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট শরীরের প্রদাহ কমাতে সাহায্য করে যা ডায়াবেটিস নিরাময়েও অবদান রাখে।
-
মিষ্টি কুমড়ার বীজে প্রচুর ম্যাগনেসিয়াম রয়েছে। রক্তে শর্করার নিয়ন্ত্রণে ম্যাগনেসিয়াম একটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান। এছাড়াও গবেষণায় দেখা যায় যারা বেশি ম্যাগনেসিয়াম গ্রহণ করেন তাদের মধ্যে টাইপ-২ ডায়াবেটিসের ঝুঁকি কম থাকে।
-
ডায়াবেটিস রোগীদের হৃদরোগের ঝুঁকি সাধারণত বেশি থাকে। কিছু গবেষণায় দেখা গেছে যে কুমড়ার বীজের পুষ্টি উপাদানগুলো রক্তচাপ কমাতে এবং কোলেস্টেরলের মাত্রা কমাতে সাহায্য করে ফলে হৃদরোগের ঝুঁকি ও কমে যায়।
-
মিষ্টি কুমড়ার বীজ ফাইবারের একটি বড় উৎস। এটি রক্তে শর্করার মাত্রা কমাতে সাহায্য করে।
-
মিষ্টি কুমড়ার বীজ ওমেগা ৩ এবং ওমেগা ৬ ফ্যাটি অ্যাসিড সমৃদ্ধ। এছাড়াএ এটি স্বাস্থ্যকর চর্বি সরবরাহ করে। যা টাইপ ২ ডায়াবেটিস এবং হৃদরোগ প্রতিরোধে সহায়তা করে।
-
মিষ্টি কুমড়ার বীজের অন্যতম যে উপাদানটি বেশ ভালো পরিমাণে পাওয়া যায় তা হচ্ছে জিঙ্ক। গবেষণা দেখায় যে জিঙ্ক ইনসুলিন রিসেপ্টর নিয়ন্ত্রণ করে আমাদের শরীরে গ্লুকোজ নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে।
মিষ্টি কুমড়ার বীজের আরও যেসকল গুণ আছে
-
মিষ্টি কুমড়ার বীজ ফ্রি র্যাডিকাল থেকে আমাদের শরীরকে প্রতিরক্ষা দেয়। মুক্ত র্যাডিকাল হচ্ছে একধরনের অস্থির পরমাণু। এরা অন্যান্য পরমাণু থেকে ইলেকট্রন নিতে চায় এবং এই প্রক্রিয়াটি অক্সিডেটিভ স্ট্রেসের দিকে পরিচালিত করে যা আমাদের শরীরের কোষগুলিকে ক্ষতিগ্রস্ত করে ফলে বার্ধক্য এবং বিভিন্ন রোগের জন্ম হয়। মিষ্টি কুমড়ার বীজে থাকা ভিটামিন ই এবং ক্যারোটিনয়েডের মতো অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ফ্রি র্যাডিক্যালজনিত ক্ষতির প্রভাব প্রতিরোধ করতে সাহায্য করে।
-
মিষ্টি কুমড়ার বীজ হাড়ের গঠন এবং সামগ্রিক হাড়ের স্বাস্থ্যের জন্যও গুরুত্বপূর্ণ। আমাদের হাড়ের একটি মূল উপাদান হচ্ছে ম্যাগনেসিয়াম। হাড়ে প্রায় ৫০-৬০% ম্যাগনেসিয়াম থাকে। কুমড়োর বীজে থাকা ম্যাগনেসিয়াম হাড়ের সুস্বাস্থ্য নিশ্চিত করে। এটি মহিলাদের মধ্যে অস্টিওপরোসিসের ঝুঁকি কমায়।
-
কুমড়ার বীজ প্রোটিনের একটি ভালো উৎস। ২৮ গ্রাম কুমড়োর বীজে প্রায় ৭ গ্রাম প্রোটিন থাকে। যা নখ এবং চুলের গঠনে, রক্তে শর্করা নিয়ন্ত্রণে ভূমিকা রাখে।
আপনার দৈনন্দিন খাদ্যতালিকায় খুব সহজেই মিষ্টি কুমড়ার বীজ যুক্ত করতে পারে। এক্ষেত্রে নিম্নোক্ত খাবারগুলোর সাথে কুমড়োর বীজ একটি ভালো সংযোজন হতে পারে।
-
ওটমিল
-
দই
-
সালাদ
-
বেকড পণ্য যেমন -মাফিন, কুকিজ, কেক, বা রুটি
-
প্যানকেক/ওয়াফেলস
-
গ্রানোলা
এমনকি ড্রাই ফ্রুটস হিসেবেও কুমড়োর বীজ খেতে পারেন।
মিষ্টি কুমড়ার বীজের দাম ও মিষ্টি কুমড়ার বীজ কোথায় পাবেন
সাধারণত বড় মুদি দোকানে আজকাল খোসা ছাড়ানো মিষ্টি কুমড়ার বীজ কিনতে পাওয়া যায়। রাজধানীর চকবাজারে মিষ্টি কুমড়ার বীজ পাওয়া যায় পাইকারি দামে। এখানে প্রতি কেজি মিষ্টি কুমড়ার বীজ পাবেন ৬০০-৭০০ টাকায়। নিউমার্কেটের কাঁচাবাজার সংলগ্ন রোডে থাকা শুকনো ফলের দোকানগুলোতে মিষ্টি কুমড়ার বীজ পাবেন ৯০০ টাকা কেজিতে। চাইলে ২৫০ গ্রামও কেনা যাবে এখানে। এগুলো খোসা ছাড়ানো।