কব্জির ব্যথা বেশ বিরক্তিকর। এ ব্যথাকে অনেকে হালকা ধরনের দাঁতে ব্যথার সঙ্গেও তুলনা করেন। এটি অনেক কারণে হতে পারে। বেশিরভাগ কব্জির ব্যথার পেছনে দায়ী হলো হাতে মোচড় খাওয়া বা আঘাত পাওয়া। দীর্ঘদিন ধরে হাতের কোনো সমস্যার কারণেও কব্জির ব্যথা হতে পারে।
কব্জির ব্যথার কারণ
কব্জির ব্যথা দুটো কারণে হতে পারে। আঘাতের কারণে ও আর্থ্রাইটিসের কারণে।
আঘাতের কারণে কব্জির ব্যথা : আচমকা সামনের দিকে পড়ে গেলে আমরা হাত দিয়ে পতন ঠেকানোর চেষ্টা করি। এতে কব্জিতে মোচড় লাগা ছাড়াও হাড়ে ফাটল হতে পারে। বৃদ্ধাঙ্গুলির দিকে ফ্যাকচার হলে সেটাকে বলে স্ক্যাফয়েড ফ্র্যাকচার। যা তাৎক্ষণিক এক্সরে’তে ধরা নাও পড়তে পারে।
রিপিটিটিভ স্ট্রেস : দীর্ঘমেয়াদে কোনো কাজ, খেলা বা অভ্যাসের কারণেও কব্জিতে স্থায়ীভাবে ব্যথা হতে পারে। শরীরের কোনো একটি অঙ্গ বারবার একই চাপ নিতে থাকলে সেখানে জয়েন্টের কাছে টিসু ফুলে যায়। তখন রিপিটিটিভ স্ট্রেস ইনজুরি দেখা দেয়। টেনিস খেলা, দীর্ঘক্ষণ ফোন ব্যবহার করা, লম্বা সময় গাড়ি চালানো এসব হলো রিপিটিটিভ স্ট্রেস ইনজুরির কারণ। বিরতি না নিয়ে এ ধরনের কাজ একটানা করে গেলেই কব্জিতে আঘাত লাগতে পারে।
আর্থ্রাইটিস : দুই ধরনের আর্থ্রাইটিস কব্জিকে আক্রান্ত করতে পারে। একটি হলো অস্টিওআর্থ্রাইটিস—কব্জির হাড়ের শেষ মাথায় থাকা কার্টিলেজ ধীরে ধীরে ক্ষয় হতে থাকে। আগে কখনও কব্জিতে আঘাত পেয়ে থাকলে পরবর্তীতে এ সমস্যা হতে পারে।
আরেকটি হলো রিউম্যাটয়েড আর্থ্রাইটিস। এতে শরীরের রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থা নিজের টিসুকেই আক্রমণ করে বসে। এতে সবার আগে কব্জি আক্রান্ত হয় এবং একটি কব্জিতে ব্যথা দেখা দিলে আরেকটিতেও একই ব্যথা অনুভূত হয়।
অন্যান্য : আঙুলের মাঝামাঝি থাকা স্নায়ুতে বেশি চাপ পড়লে কার্পাল টানেল সিনড্রোম দেখা দিতে পারে। এতে কব্জিতে সূঁচ ফোটানোর মতো ব্যথা করে। তালুর বিপরীত দিকে কব্জিতে গ্যাংলিয়ন সিস্ট দেখা দিলেও কব্জি ব্যথা করবে। হাতের নাড়াচাড়ায় কারও ক্ষেত্রে এই ব্যথা কমে এবং কারও ক্ষেত্রে বাড়ে।
কব্জির ব্যথার জন্য টেস্ট ও চিকিৎসা
- প্রাথমিক পরীক্ষায় কব্জি ঘুরিয়ে রোগীকে দেখতে বলা হয় কোথায় ব্যথা লাগছে কিনা। আঘাতজনিত কারণ না হলে হাত মুষ্টিবদ্ধ করে বা বাহু শক্ত করে দেখা হয় কোনো দুর্বলতা আছে কিনা।
- তবে আঘাতজনিক কারণ থাকলে রোগীর এক্স-রে, সিটি, এমআরআই ও আল্ট্রাসাউন্ড পরীক্ষা করাতে হয়। এসব পরীক্ষায় ব্যথার কারণ শনাক্ত না হলে আর্থ্রোস্কোপি নামের আরেকটি পরীক্ষা আছে। এ পরীক্ষায় কব্জির সামান্য অংশ কেটে তাতে ক্ষুদ্র একটি ক্যামেরা ঢুকিয়ে ভেতরের ছবি তোলা হয়। দীর্ঘদিনের কব্জির ব্যথার কারণ শনাক্ত করতে এ পরীক্ষাটিই বেশি কার্যকর। আর যদি কব্জিতে কার্পাল টানেল সিনড্রোম থাকে তবে চিকিৎসক ইলেকট্রোমায়োগ্রাম করতে দিতে পারেন। এতে কব্জি সংশ্লিষ্ট মাংসপেশিতে একটি সূঁচের মতো ইলেকট্রোড প্রবেশ করিয়ে পেশির বৈদ্যুতিক প্রবাহ মেপে দেখা হয়।
- ব্যথার কারণ সাধারণ হলে অনেক সময় ডাক্তার শুধু ব্যথার ওষুধ দিয়ে থাকেন। ভেতরে হাড় ভেঙে থাকলে সেগুলোকে নির্দিষ্ট বিন্যাসে এনে একটি বাড়তি ধাতব টুকরো দিয়ে না সেরে পর্যন্ত রাখা হয়।
- কব্জির টেন্ডন বা লিগামেন্ট ছিঁড়ে গেলে দরকার হয় অস্ত্রোপচারের। আবার কার্পাল টানেল সিনড্রোমের ক্ষেত্রে টানেলের উপরিভাগে থাকা লিগামেন্টটিকে কেটে স্নায়ুর ওপর চাপ কমাতে হয়।