হাঁটুব্যথা এমন একটি সমস্যা যা সব বয়সী লোককে আক্রান্ত করে। আমাদের শরীরের গুরুত্বপূর্ণ অস্থিসন্ধি হলো হাঁটু, যা শরীরের ওজন বহন করার সাথে দাঁড়াতে, হাঁটতে, দৌঁড়াতে ও বসতে সাহায্য করে। তাই হাঁটুব্যথা কে অবহেলা করলে চলবে না। সঠিক চিকিৎসা না করালে দীর্ঘমেয়াদি সমস্য তৈরী করে। হালকা ব্যথা কিছু নিয়ম মানলে ঠিক হয়ে যায়, নির্দিষ্ট ব্যয়াম ও নি-ব্রেস পরলে ব্যথা কমে। আবার জটিল ক্ষেত্রে হাঁটুতে অপারেশনেরও প্রয়োজন হতে পারে।

হাঁটুব্যথার কারণ
- আঘাত জনিত কারণ হাঁটুতে আঘাত পেলে, পেশী ও লিগামেন্টে চাপ বা টান খেলে, লিগামেন্ট ছিড়ে গেলে
- লিঙ্গজনিত কারণ-পুরুষের তুলনায় নারীদের হাঁটুব্যথা বেশী হয় এবং তা মেনোপজ বা মাসিক বন্ধের পর বেশী হয়
- বয়সজনিত কারণ-বয়স বাড়ার সাথে সাথে হাড়ক্ষয়ের প্রবণতা বৃদ্ধি পায়, সাধারণত ৪৫ বছরের পর এ রোগ বেশী হয়
- বিভিন্ন বাত ব্যথার কারণ
- জীবানুর প্রদাহজনিত কারণ
- হাঁটুতে ক্রিস্টাল বা স্ফটিক জাতীয় পদার্থের প্রভাব
- অতিরিক্ত দৈহিক ওজন হাঁটুতে চাপ সৃষ্টির ফলে ব্যথা হয়
- কোমরের সমস্যাজনিত ব্যথার কারণ
- সঠিক দেহভঙ্গির অভাব
- বিভিন্ন রোগের কারণে, যেমন-ক্যান্সার, হিমোফিলিয়া, টিউবারকুলোসিস ইত্যাদি
- পেশাজনিত কারণ-যারা দীর্ঘক্ষণ দাঁড়িয়ে কাজ করেন, অতিরিক্ত সিঁড়ি দিয়ে ওঠানামা, যারা মাথা বা কাঁধে অতিরিক্ত ভার বহন করেন।
হাঁটুব্যথার উপসর্গ
- হাঁটুব্যথা, হাঁটু ফুলে যাওয়া ও শক্ত হয়ে যাওয়া
- হাঁটু ভাজ করতে কষ্টবোধ করা
- হাঁটু লাল হয়ে যাওয়া এবং হাত দিলে গরম অনুভূত হওযা
- বসা হতে দাঁড়ানো ও দাঁড়ানো থেকে বসতে কষ্টবোধ হওয়া
- হাঁটুতে দূর্বলতা বোধ করা বা জোর না পাওয়া
- হাঁটু পুরোপুরি সোজা করতে না পারা
- হাঁটার সময় বা হাঁটুর নড়াচড়ায় শব্দ অনুভূত হওয়া।
রোগ নির্ণয়
- এক্স-রে, সিটি স্ক্যান, আল্ট্রাসনোগ্রাম, এমআরআই
- বোন মিনারেল ডেনসিটি পরীক্ষা
- আর এইচ ফ্যাক্টর, সিরাম ক্যালসিয়াম লেভেল পরীক্ষা
চিকিৎসা
হাঁটুব্যথার জন্য সুনির্দিষ্ট চিকিৎসার প্রয়োজন হয়। রোগীর ব্যথার ধরণের উপর ব্যবস্থাপত্র দেওয়া হয়। ঔষুধ খেয়ে ব্যথার উন্নতি না হলে থেরাপি, ইনজেকশন প্রয়োগ করা হয়। তবে ক্ষেত্র বিশেষে অস্ত্রোপচারের প্রয়োজন পড়ে।
প্রতিকার
- দীর্ঘক্ষণ দাড়িয়ে কাজ করলে কাজের ফাঁকে বিরতি নিতে হবে অথবা বসে কাজ করতে হবে
- চলাফেলার সময় সমতল, রাস্তা ব্যবহার করা
- সিঁড়ি দিয়ে বেশি ওঠানামার জন্য লিফট ব্যবহার করা
- উচু হিলের জুতা ব্যবহার না করা, পায়ের ক্ষেত্রে সঠিক মাপের জুতা ব্যবহার করা
- শারীরিক ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখা
- প্রতিদিন সূর্যের আলোতে কিছু সময়ের জন্য থাকা
- ভারী কাজ যথাসম্ভব সতর্কতা অবলম্বন করা
- ডায়াবেটিস থাকলে তা নিয়ন্ত্রণে রাখা
- উঁচু কমোড ব্যবহার করা
- ক্যালসিয়াম, ওমেগা-৩, ফ্যাটি এসিড, ভিটামিন-এ.বি.সি, কোলাজেন ও খনিজ সমৃদ্ধ খাদ্য গ্রহণ করা
- হাঁটুব্যথার সবচেয়ে বেশি জরুরী হলো বিশ্রাম
- ব্যথা পেলে কাপড়ে বরফ জড়িয়ে রাখতে হবে
- হাঁটু ব্যথার কারণ যাই হোক, ঠান্ডা-গরম সেঁক দিলে আরাম পাওয়া যায়
- হাঁটুর ব্যথা কমাতে সঠিক ব্যয়াম বেছে নেওয়া অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
ডা. মোঃ হুমায়ুন কবীর
হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসক, গবেষক, স্বাস্থ্য নিবন্ধকার।
রেনেসাঁ হোমিও মেডিকেয়ার
২৫/৩, নবাব কাঁটারা, নিমতলী, চাঁনখারপুল, ঢাকা- ১০০০।
মোবাইল নম্বরঃ- ০১৭১৭-৪৬১৪৫০, ০১৯১২-৭৯২৮৯৪।