ক্যান্সার মানেই মৃত্য—এ আপ্ত বাক্যটির যথার্থতা সম্পর্কে কয়েক বছর আগেও মানুষের মনে সন্দেহের অবকাশ ছিল না। কিন্তু ক্রমবিবর্তনশীল সমাজে সবকিছু বদলের সঙ্গে সঙ্গে বদল এসেছে মানুষের দৃষ্টিভঙ্গিতে। এরই সঙ্গে যুক্ত হয়েছে বিজ্ঞানের অগ্রগতিও। ফলস্বরূপ, এই মরণ রোগ থেকে পুনর্জীবন লাভের উত্তর যেখানে চিকিৎসকদের কাছেও দ্বন্দ্বের কারণ হতো, সেই সংশয় আজ অনেকটাই নিরসনের পথে। এ অসম্ভবকে সম্ভব করতে সাহায্য করেছে ক্যান্সার চিকিৎসায় সার্জারির ভূমিকা। যেখানে সঠিক সময়ে শনাক্তকরণের মাধ্যমে এবং ক্যান্সারের স্তরের ওপর নির্ভর করে রোগীকে অনেকটাই নতুন জীবন দেওয়া সম্ভব হচ্ছে। বর্তমানে অনেক অত্যাধুনিক সার্জারি আসায় চিকিৎসার গুণগত মানও অনেক উন্নত হচ্ছে।
ক্যান্সার সার্জারি কী?
- ক্যান্সার সার্জারি হলো শরীর থেকে ক্যান্সার টিস্যু বাদ দেওয়ার সার্জারি।
- সার্জারির কারণ
- ক্যান্সার শনাক্তকরণ
- ক্যান্সার নির্মূল করতে
- শরীরের কোনো অংশের পুনর্গঠনের ক্ষেত্রে
- ক্যান্সারের সম্ভাবনা কমাতে বা প্রতিরোধ করতে
- উপসর্গ আয়ত্তের মধ্যে নিয়ে আসার জন্য
ক্যান্সার শনাক্তকরণ সার্জারি
ক্যান্সার শনাক্তকরণের জন্য সার্জন আক্রান্ত জায়গায় একটি ছোট টিস্যু নিয়ে পরীক্ষা করেন। চিকিৎসার পরিভাষায় একে বায়োসপি বলা হয়। বায়োসপির মাধ্যমে ক্যান্সার সেল ধরা পড়লে এর প্রকৃতি এবং কতদূর তা ছড়িয়েছে বোঝা সম্ভব হয়।
চিকিৎসা পদ্ধতি হিসেবে সার্জারি
- ক্যান্সার চিকিৎসায় অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে সার্জারি। অনেক সময়ে এটি একমাত্র চিকিৎসা হিসেবেও বিবেচিত হয়। শরীরের যে জায়গায় ক্যান্সার হয়েছে শুধু সেই জায়গায় সার্জারি করা হয়। ফলে শরীরের অন্যান্য স্থানে ক্যান্সার ছড়িয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে না। সাধারণত যত তাড়াতাড়ি ক্যান্সার ধরা পড়ে তত তাড়াতাড়ি তাকে নির্মূল করা সহজ হয়।
- যদি ক্যান্সার শরীরের অন্যান্য অংশে ছড়িয়ে যায় সে ক্ষেত্রে সার্জারি সবসময় ফলপ্রসূ হয় না। এ সময় চিকিৎসকরা অন্য ধরনের চিকিৎসা করে থাকেন, যার প্রভাব সারা শরীরে পড়ে। যেমন—রেডিওথেরাপি, কেমোথেরাপি, বায়োলজিক্যাল থেরাপি, হরমোন থেরাপি।
সার্জারি কখন করা হয়, কখন করা হয় না
- কিছু ক্যান্সারের ক্ষেত্রে সার্জারিই একমাত্র চিকিৎসা। অন্য কিছু কিছু ক্ষেত্রে সার্জারি যেমন—
- কী ধরনের ক্যান্সার
- ক্যান্সারের স্তর ও প্রকৃতি
- সাধারণত স্বাস্থ্যের ওপর নির্ভর করে করা হয়
- সলিড টিউমারের ক্ষেত্রে সার্জারি করা হয়। যেমন—কোলন, প্রস্টেট, ব্রেস্ট, ওভারি, ইউটেরাস, ওরাল খাদ্যনালির ক্যান্সার।
- ব্লাড ক্যান্সার বা লিউকোমিয়া কিংবা লিম্ফোমার ক্ষেত্রে সার্জারি করা হয় না বা করা যায় না। এসব ক্ষেত্রে ওষুধ, কেমোথেরাপি, রেডিওথেরাপি চিকিৎসা করা হয়। অনেক সময় টিউমারের অবস্থানের জন্যও সার্জারি সম্ভব হয় না। যেমন—টিউমারটি যদি ব্লাড ভেসেল বা সূক্ষ্ম কোনো টিস্যুর পাশে থাকে, সে ক্ষেত্রে সার্জারির কারণে পাশের টিস্যুগুলোর ক্ষতির আশঙ্কা থাকে। বর্তমানে অনেক ক্যান্সার সার্জারি ল্যাপারোস্কপিক পদ্ধতিতে ক্যান্সার শনাক্তকরণ, স্তর নির্ধারণ, চিকিৎসা সবই হচ্ছে।
লেখক : এডিটর ইন চিফ
সাপ্তাহিক তিলোওমা ও পাক্ষিক স্বাস্থ্যসেবা