
শীতকালে তাপমাত্রা কম থাকার কারণে মাছের রোগে আক্রান্ত হওয়ার প্রবণতা বেড়ে যায়। এসময় ভাইরাস, ব্যাকটেরিয়া এবং ফাঙ্গাল ইনফেকশনের আশঙ্কা থাকে বেশি। মাছের যথাযথ পরিচর্যার অভাবে এই রোগবালাই আরও বাড়তে পারে, যার ফলে মাছ চাষীরা বড় ধরনের আর্থিক ক্ষতির মুখে পড়েন।
শীত মৌসুমে (নভেম্বর থেকে ফেব্রুয়ারি) তাপমাত্রা কম থাকার কারণে মাছের খাবার গ্রহণের চাহিদা হ্রাস পায়। অনেক চাষী অজ্ঞতাবশত অতিরিক্ত খাবার দেন, যা পানিতে জমে পানির গুণগত মান নষ্ট করে। এতে বিভিন্ন পরজীবি এবং রোগের আক্রমণ বেড়ে যায়। তাই মাছের সঠিক পরিচর্যা ও সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে এসব সমস্যা এড়িয়ে চলা সম্ভব।
শীতকালে মাছ চাষে করণীয়-
১. খাবার ব্যবস্থাপনা:
মাছের আকার অনুযায়ী খাবার দিতে হবে।
খাবারের পরিমাণ মাছের মোট ওজনের ১-২% এর বেশি দেওয়া উচিত নয়।
দিনে দুইবার খাবার দিতে হবে(সকাল এবং বিকেল)।
২. পানির গুণগত মান বজায় রাখা:
প্রতি শতকে ১ কেজি চুন পানিতে মিশিয়ে ছিটিয়ে দিতে হবে।
পানির ঘোলাটে ভাব দূর করতে প্রতি শতকে ১-১.৫ কেজি জিপসাম ব্যবহার করা যায়।
পানির মান ও পিএইচ (pH) নিয়ন্ত্রণে রাখতে জিওলাইট ব্যবহার করা যেতে পারে।
পুকুরের কোণায় খড়ের ছোট ছোট আটি রেখে দিলে পানি পরিষ্কার থাকে।
৩. মাছের ঘনত্ব নিয়ন্ত্রণ:
প্রতি শতকে চার ইঞ্চি আকারের ৪০টি পোনা রাখা যেতে পারে।
অতিরিক্ত মাছ রাখার ফলে অক্সিজেনের ঘাটতি এবং পুষ্টিহীনতা দেখা দেয়, যা মাছের বৃদ্ধি বাধাগ্রস্ত করে।
৪. রোগ প্রতিরোধ ও চিকিৎসা
মাছের ব্যাকটেরিয়াজনিত রোগ প্রতিরোধে খাদ্যে নিয়মিত ভিটামিন ও খনিজ ব্যবহার করা জরুরি।
ক্ষত রোগ প্রতিকারে প্রতি কেজি খাদ্যের সাথে ১০০ মিলিগ্রাম টেরামাইসিন বা স্ট্রেপটোমাইসিন মিশিয়ে টানা সাত দিন খাওয়াতে হবে।
শীতকালে মাছ চাষের সময় নিয়মিতভাবে পানির মান পরীক্ষা এবং মাছের স্বাস্থ্যের প্রতি নজর দেওয়া খুবই গুরুত্বপূর্ণ। সঠিক ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে মাছের রোগবালাই কমিয়ে উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধি করা সম্ভব।
লেখক: তাসনীম সিদ্দিকা
শিক্ষার্থী, বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়